সংবাদ
আইভীর এই শক্তির উৎস কি?
নিজস্ব সংবাদদাতা // মেয়র আইভী হঠাৎ করেই রাজনীতি নিয়ে বেশ সক্রিয় হয়েছেন। তার দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে জনপ্রতিনিধি হবার পর রাজনৈতিক বক্তব্যের চাইতে নারায়ণগঞ্জের উন্নয়ন এবং দেশের উন্নয়ন মূলক বক্তব্য বেশী রাখতেন। মূলত রাজনীতিতে পজেটিভ ধারার ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হলে আইভী থাকবেন সামনের সারিতে। পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে আনোয়ার হোসেনকে বিবেচনা করা হলেও, শান্তিপ্রিয় এবং পজেটিভ মানসিকতার রাজনীতিবিদ হিসেবে আইভী থাকেন সবার থেকে এগিয়ে।
আগস্ট থেকেই রাজনীতিতে বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছেন তিনি। বিশেষ করে প্রতিমন্ত্রী মর্যাদা প্রাপ্তি এবং ভারত থেকে ফিরে জনপ্রতিনিধিত্বের পাশাপাশি রাজনৈতিক বক্তব্য রাখা শুরু করেছেন। রাজনীতিতে নিজেদের ভুল এবং সংশোধনের বিষয়গুলো তুলে ধরছেন বার বার। মেয়র আইভী বরাবরই প্রতিবাদী হিসেবে পরিচিত শহরে। তবে রাজনীতিতে সক্রিয়তার চিত্র দেখেননি অনেকেই। এবার নতুন করে রাজনৈতিক ইস্যুতে সক্রিয় হওয়ায় দলীয় প্রশংসা পাচ্ছেন ব্যাপক।
সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে এবং সোনারগাঁয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে দলের বিষয়ে বক্তব্য রেখে প্রশংসা কুড়িয়েছেন মেয়র আইভী। দলকে নিয়ে তার অবস্থান, ভাবনা আলাদাভাবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে তাকে। একই সাথে আওয়ামী লীগকে সাইডে রেখে কেন সোনারগায় জাপাকে স্পেস দেয়া হচ্ছে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন মেয়র আইভী।
সোনারগাঁয় আওয়ামী লীগের সম্মেলনে মেয়র আইভী বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, বিগত দিনে আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জের ভূমিকা ছিল সব সময়ে গুরুত্ব। এ জেলা থেকে জোহা চুনকার মিছিল না গেলে ঢাকার সমাবেশ হতো না। কিন্তু এখন এক নেতার এক দেশ হয়ে গিয়েছে নারায়ণগঞ্জ। আমি নারায়ণগঞ্জের নেতাদের বলছি সকলকে সমান সম্মান দেওয়া উচিত। এ দল টিকে আছে তৃণমূলের জন্য। দুঃসময়ে যারা দলের হাল ধরে তাদের অসম্মান করার অধিকার নারায়ণগঞ্জের কোন বড় নেতার নাই। আওয়ামী লীগের সুসময়ে যারা ছিল তাদেরকেই শুধু পদায়ন করলে চলবে না বরং যারা দুঃসময়ে ছিল তারাই প্রকৃত দেশপ্রেমিক দলপ্রেমিক।
মেয়র আইভী জাপাকে আসন ছেড়ে দেয়ার সমালোচনা করে বলেন, সোনারগাঁয়ে কি এমন হয়েছে যে বার বার এখানে জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিতে হবে। নারায়ণগঞ্জে না হয় কারণ ছিল যে জোহা কাকার ছেলেকে (সেলিম ওসমান) দিতে হবে। কিন্তু সোনারগাঁয়ে যার নাম ছিল না, নিশানা ছিল না তাকে কেন দিতে হবে। সোনারগাঁয়ের আওয়ামী লীগের নেতারা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না নারায়ণগঞ্জের হস্তক্ষেপের কারণে। এখন অনেকেই অমুক ভাই তমুক ভাইয়ের নামে স্লোগান দেয়। কিন্তু ক্ষমতা না থাকলে আর কেউ থাকে না। তারা ভেসে যাবে। তাই স্লোগান দিতে হবে আমাদের দলের ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে।
এর আগে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে বক্তব্য প্রদানকালে মেয়র আইভী বলেন, দলের ভেতরেই সবচেয়ে বেশী ঝামেলা তৈরী করা হয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিলো মোস্তাক। এই দলের ভেতরেই দলটির চরম শত্রু লুকিয়ে আছে। আমাদের চিনে রাখতে হবে দুঃসময়ে কারা আমাদের দলের পাশে ছিলো। ২১ আগস্ট যেভাবে সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা করা হলো তখন কারা প্রতিবাদ করেছিল? সেদিন আনোয়ার কাকা, খোকন সাহা, আরাফাত, আমি সহ আমরা মিছিল করেছিলাম। ওয়ান ইলেভেনে যখন নেত্রীকে গ্রেপ্তার করলো তখন তো আমি কোন বড় নেতাকে দেখিনাই এই শহরে। আজকে যারা হুংকার দেয় দুঃসময় আসছে, এই করে ফেলবে, সেই করে ফেলবে। তো তখন কোথায় ছিলেন ভাই ব্রাদার রা? এত নেতাকর্মীরা কই ছিলেন? এত বড় বড় কথা কন। আজকে যারা আশেপাশে এই গুটি কয়েকজনেই তো মিছিল মিটিং করলাম দুঃসময়ে। দেখতে হবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কারা বেশী লাভবান হয়েছে? কাদের দেশে বিদেশে অবস্থান সুদৃঢ় হয়েছে? যারা দেশে থাকে তারাই দেশে নির্যাতন, হামলা মামলার শিকার হয়।
আইভীর এমন সাহসী বক্তব্যে অবাক না হলেও দলকে নিয়ে তার চিন্তা ভাবনার বিষয় নিয়ে প্রশংসা করেছেন কর্মীরা। তারা বলছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে যেসব নেতারা কেবলমাত্র নিজের জন্য দলীয় আসন ছেড়ে দেয়, অন্যদলের লোক আওয়ামী লীগে ঢুকিয়ে পদায়ন করে, জনপ্রতিনিধি বানায় তাদের প্রতি হুশিয়ারি উচ্চারন করেছেন আইভী। এতে করে প্রতিপক্ষ বলয়ে একটু হলেও চিন্তার ভাঁজ বেড়েছে।
দলের সূত্র বলছেন, মেয়র আইভীর এই সাহসের পেছনে তার স্বচ্ছতার পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাশে পাওয়া অন্যতম কারণ। বর্তমানে মেয়র আইভী তার সাফল্যের শীর্ষ সময় অতিবাহিত করছেন। নাসিক নির্বাচনে জয়লাভের পর ওসমান পরিবার ব্যতিত আওয়ামী লীগের প্রায় সবকটি বলয় এখন আইভীর সাথে রয়েছে। এমনটি শামীম ওসমানের রাজনীতি করা নেতারাও গোপনে আইভীর সাথে দেখা সাক্ষাৎ করে নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখছেন। তারা প্রতিনিয়ত এসে দলের দুঃসময় এবং ভেতরের ভঙ্গুর চিত্র তুলে ধরছেন। বলছেন, ত্যাগী নেতারা কতটা অসহায় হয়ে আছেন হাইব্রিডদের সামনে।
এমন পরিস্থিতিতে যখন একজন নেতা প্রয়োজন দলের ভেতরে থাকা ত্যাগী ও মূল ধারার রাজনীতিকদের। ঠিক তখনই তাদের আশা ভরসার প্রতীক হয়ে উঠেছেন আইভী। যেহেতু মুলধারার সকলেই তার সাথে, দলের শীর্ষ পর্যায়ের গ্রীন সিগন্যালও তার পক্ষে। এসব দিক বিবেচনা করেই এবার নগরের মতই নিজেদের দলকে পরিচ্ছন্নভাবে সাজাবার চিন্তা করছেন আইভী। আর সেই কারনেই হাইব্রিড এবং হাইব্রিডদের পৃষ্ঠপোষকতাকারী নেতাদের এক হাত নিচ্ছেন আইভী।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইভী তার এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে অচিরেই বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে রাজনীতিতে। এককালে শামীম ওসমানের বিপরীতে কথা বলার কেউ ছিলো না এই শহরে। আইভীর কারনেই সেই স্থানে এসেছে পরিবর্তন। এতদিন আইভী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সাহসী বক্তব্য রাখলেও দলের ভেতর অব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন জরুরী ছিলো। আর সেখানে নিজেকে দাঁড় করিয়ে পরিবর্তনের ডাক দিয়েছেন। সাথে রয়েছেন মূল ধারার সকলে। ফলে আগামীতে দলের রাজনীতিতেও বড় ভুমিকা রাখতে যাচ্ছেন আইভী