সংবাদ
উখিয়ায় ফাঁদ পেতে অতিথি পাখি শিকার
প্রকৃতিতে শুরু হয়েছে আগাম শীতের আগমন। উখিয়া উপজেলার সর্বত্রে হালকা কুয়াশা দেখা দিচ্ছে গত এক সপ্তাহ ধরে। শীতের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে আসতে শুরু করেছে অতিথি পাখি। বিকেলে পাখির ঝাঁকের নয়নাভিরাম দৃশ্য বাড়িয়ে দিচ্ছে সৌন্দর্য। প্রাণভরে উপভোগ করছেন অবকাশকালীন মানুষেরা। স্বচ্ছ পানির ঢেউয়ে নীলাভ আকাশ ভেসে উঠলে পাওয়া যায় সাগরের দৃশ্য, পাখির উড়াউড়ি আর কলতানে অন্যরকম আবেশ ছড়িয়ে দেয়।
শীতের মৌসুমের আগেই অতিথি পাখির আনাগোনাও শুরু। উখিয়ার ডেবা, জলাশয়, খাল-বিলগুলো এখন অতিথি পাখির কলকাকলীতে মুখর। চোরা শিকারীরাও তৎপর। চলছে এই পাখি শিকারের মহোৎসব।
নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বিষটোপ কিংবা ফাঁদ পেতে অবাধে শিকার করা হচ্ছে অতিথি পাখি। এতে পরিবেশের ওপর বিরুপ প্রভাবসহ অতিথি পাখির আগমন দিন দিন কমে যাচ্ছে। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এক শ্রেণীর অসাধু পাখি শিকারি পাখি শিকার করে যাচ্ছে।
সম্প্রতি কক্সবাজারের উখিয়ায় ধান খেতে অবৈধ কারেন্ট জালে পেতে সাদা বক ধরা হচ্ছিল। খবর পেয়ে উখিয়া বনবিভাগ অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করলো ৪৮টি সাদা বক। এ সময় ধানক্ষেত্রে থেকে ১২০০ মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়।
মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) বিকেলে উখিয়া বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তার প্রাকৃতিক পরিবেশে উদ্ধার করা ৪৮টি সাদা বকগুলো অবমুক্ত করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে উখিয়া বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী শফিউল আলম বলেন, রাজাপালং মাসকারিয়া বিল এলাকার ধান খেত এলাকায় কিছু অসাধু শিকারিরা ধান খেতে কারেন্ট জালে ফাঁদ পেতে রাখেন। পরে বকগুলো জালে আটকা পড়ে। এমনই এক গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উখিয়া বনবিভাগ অভিযান চালায়। অভিযানের টের পেয়ে বক শিকারিরা পালিয়ে যায় এবং সাদা বক পাখির ফাঁদ পাতার কাজে ব্যবহৃত ১২০০ মিটার অবৈধ কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ অনুযায়ী পাখি নিধনের সর্বোচ্চ শাস্তি এক বছর জেল, এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড ও হতে পারে। একই অপরাধ ফের করলে শাস্তি ও জরিমানা দ্বিগুণের বিধানও রয়েছে। কোনো ব্যক্তি অতিথি পাখির মাংস ও দেহের অংশ সংগ্রহ বা দখলে রাখলে অথবা বেচাকেনা করলে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। আসন্ন শীত মৌসুমের আগেই অতিথি পাখিসহ বিভিন্ন ধরনের পাখি দেশের বিভিন্ন জলাশয়-বিলে আসছে। তারা যেন নির্বিঘ্নে বিচরণ করতে পারে, সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এসব পাখি শিকার থেকে বিরত থাকার জন্য মানুষকে সচেতন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান হোসাইন বলেন, আসন্ন শীত মৌসুমের আগেই পরিযায়ী পাখিসহ বিভিন্ন ধরনের পাখি উপজেলার বিভিন্ন জলাশয়-বিলে আসছে। পাখিরা যেন নির্বিঘ্নে বিচরণ করতে পারে, সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এসব পাখি শিকার থেকে বিরত থাকার জন্য মানুষকে সচেতন করতে উপজেলা প্রশাসন বন বিভাগের মাধ্যমে এলাকায় মাইকিংয়ের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
এ সময় বিট কর্মকর্তা রাকিব হোসাইন রাজু, বিট কর্মকর্তা দুলাল চন্দ্র, সদর বিট কর্মকর্তা সাজ্জাদুজামান, বিট কর্মকর্তা বিকাশ দাশসহ বনকর্মী ও সিপিসির ৫০ জন কর্মী উপস্থিত ছিলেন।