সংবাদ
কোমলমতি শিশুদের হত্যা রুখতে হবে
অভিজিৎ সাহা: কিছুতেই রক্ষা করা যাচ্ছে না কোমলমতি শিশুদের। তারা নানাভাবে অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এমনকি হত্যার শিকার হচ্ছে শিশুরা। সমাজে মাঝে মধ্যে এমন সব হৃদয়বিদারক অপরাধ ঘটে যায়, যা শুনলে সচেতন যে কারো গা শিউরে উঠতে পারে। আঁতকে উঠতে পারে সহসাই। বেদনাকাতর মন ক্ষণিকের জন্য হারিয়ে যেতে পারে ভাবনার সীমাহীন প্রান্তরে।
অনেকের প্রশ্ন জাগে, কেন ঘটে এমন সব অমানবিক ঘটনা? আইনি শিথিলতা, বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতা নাকি বিচারহীনতার কারণে অপরাধীরা বেশি উৎসাহিত হচ্ছে এসব অপরাধ করতেÑ এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে চারদিকে। মানবকণ্ঠে প্রকাশিত একটি সংবাদ আবার আলোচনায় এনেছে এমন নিষ্ঠুরতার। মুক্তিপণ আদায়ের জন্য আয়াতকে অপহরণ করে তাদের সাবেক ভাড়াটিয়া আবির আলী।
গত ১৫ নভেম্বর নগরীর ইপিজেড থানাধীন বন্দরটিলা নয়াহাট বিদ্যুৎ অফিস এলাকার মসজিদের পাশ থেকে আরবি পড়তে যাওয়ার সময় আয়াতকে অপহরণের চেষ্টা করে সে। অপহরণ করার সময় চিৎকার করলে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে লাশ আকমল আলী সড়কে অবস্থিত নিজ বাসায় নিয়ে ছয় টুকরো করে। এসব টুকরো দুটি বস্তায় করে পতেঙ্গা বেড়িবাঁধ এলাকায় বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেয়।
‘১০ দিন ধরে নিখোঁজ আয়াত আর বেঁচে নেই’, পিবিআই থেকে গত শুক্রবার সকালে এমন তথ্য পেয়ে আহাজারিতে ভেঙে পড়েন মা-বাবাসহ স্বজনরা। বাড়িতে এখন শোকের মাতম। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে তারা এখন নিঃস্ব। তাকে অপহরণের পর হত্যা করে আবির আলী নামে এক পোশাকশ্রমিক। এই ঘাতক রংপুর তারাগঞ্জ এলাকার আজমল আলীর ছেলে। চট্টগ্রাম নগরের ইপিজেড এলাকার ভাড়া বাসায় থাকেন। এর আগে নিহত আয়াতের দাদার বাসায় ভাড়া থাকত সে। এমন নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে কেন- এমন প্রশ্ন সবার? সংবাদটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। মানুষ কতটা নিষ্ঠুর হলে এই অমানবিক ঘটনা ঘটাতে পারে- সেটাই প্রশ্ন। নির্যাতন ও হত্যার নানা ধরন থাকে। এসব ধরন সমাজে অনেকের কাছে পরিচিত। কিন্তু শিশু আয়াতের ছোট্ট দেহটি ৬ টুকরো করে বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেয়া কতটা ভয়ঙ্কর- এটা ভাবা যায় না।
এমন ঘটনা নতুন নয়, এই ধরনের বর্বর ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। এই ঘটনায় নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। মানুষ কতটা নিষ্ঠুর হলে এমন ঘটনা ঘটাতে পারে তা ভাবতেও অবাক লাগে। এটা সত্য, সমাজের একশ্রেণির বর্বর পাষণ্ড মানুষের হাতে অনেকের জীবনই বিপন্ন হয়ে পড়ছে, অবলীলায় জীবন চলে যাচ্ছে। এমনকি শিশুর জীবনও চলে যাচ্ছে। সমাজে শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে। ঠুনকো কারণে শিশুদের হত্যা করা জঘন্য অপরাধ।
এসব ঘটনায় নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিরা কতটা বিচার পেয়েছে, তা প্রশ্ন সাপেক্ষ। তবে বারবার ঘটে যাওয়া এই ঘটনাগুলো এটাই প্রমাণ করেছে, আমাদের বিচার-প্রক্রিয়া এবং আইনি তৎপরতার দুর্বলতার কারণে উপযুক্ত শাস্তি থেকে বেঁচে যায় অপরাধীরা। এই পার পেয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া সমাজে আরো অনেককে একই ধরনের অপরাধ সংঘটনে উৎসাহিত করে। আগের ঘটনাগুলোই আয়াতের এই ঘটনাকে উৎসাহিত করেছে নিঃসন্দেহে। সামাজিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার কারণেই মূলত এমনটি হচ্ছে। রাষ্ট্রের মধ্যে শৃঙ্খলা না থাকলে সামাজিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে এটাই স্বাভাবিক।
যারা সমাজকে, রাষ্ট্রকে পদে পদে কলুষিত করছে, সমাজকে ভারসাম্যহীন ও দূষিত করে তুলছে, সমাজের মানুষের নিরাপত্তা ও অধিকার ক্ষুণ্ন করছে, বিপন্ন করছে শিশুদের জীবন- তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। যদি আগের ওইসব ঘটনার তাৎক্ষণিক বিচার হতো দ্রুত বিচার আইনের আওতায়, তাহলে তা সমাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকত। সমাজের যে কোনো গুরুতর অপরাধের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক আইনি পদক্ষেপ নেয়া দরকার। সে সঙ্গে দ্রুত বিচারও সমাপন করা দরকার। এসব অপরাধীর তাৎক্ষণিক বিচার হওয়া উচিত। এসব জঘন্য অপরাধী আইনের ভয়ে কেঁপে উঠবে। এতে সমাজে কমে আসবে অপরাধ। সামাজিক সুস্থতা আনয়নের পাশাপাশি নতুন সমাজ নির্মাণের জন্য এ ধরনের অপরাধ ও অবক্ষয়কে প্রতিরোধ করতে হবে এবং যে কোনো মূল্যে।
লেখক : সাংস্কৃতিক ও গণমাধ্যমকর্মী।