সংবাদ
না’গঞ্জে আলোচিত স্বপন হত্যায় পিন্টুর মৃত্যুদ-, রতœার যাবজ্জীবন
শহরের নিতাইগঞ্জের আলোচিত কাপড় ব্যবসায়ি স্বপন কুমার সাহা ওরফে সাইদুর ইসলাম স্বপন হত্যা মামলায় বন্ধুরূপী ঘাতক পিন্টুকে ফাঁসি ও বান্ধবী রতœা রানীকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে তাদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। স্বপন কুমার সাহাকে বাসা থেকে ডেকে এনে জুসের সঙ্গে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে অচেতন করে হত্যার পর লাশ বঁটি দিয়ে কুপিয়ে সাত টুকরা করা হয়। পরে বাজারের ব্যাগে ভরে লাশের টুকরোগুলো শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয় ঘাতকরা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ-১ আদালতের বিচারক উম্মে সরাবান তহুরা এ রায় দেন। অপর আসামী আব্দুল্লাহ আল মামুন মোল্লাকে খালাস দিয়েছেন আদালত। রায় ঘোষণার পর স্বপন কুমারের বড় ভাই অজিত কুমার সাহা বলেন, আমরা এ রায়ে সন্তুষ্ট। রাষ্ট্রপক্ষের কাছে আমাদের দাবি অতিদ্রুত যেন রায়টি কার্যকর করা হয়। আদালতের অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট মাকসুদা আহম্মেদ বলেন, মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি পিন্টু দেবনাথ ও যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত রত্মা রানী চক্রবর্তীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করেছেন। একই সঙ্গে ভিকটিমের মরদেহ ৭ টুকরা করে বস্তাবন্দী করে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দিয়েছিল। পরে সেই হত্যাকান্ডের আলামত সংগ্রহ করা হয়। এবং থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মোট ১৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের ভিত্তিতে আদালত এ রায় ঘোষণা করেছেন। তিনি আরও বলেন, মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পিন্টু দেবনাথ নারায়ণগঞ্জের আরেকটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত হয়েছিল। সেই মামলার ভিকটিম ছিল ভোলানাথ জুয়েলার্সের মালিক প্রবীর ঘোষ। তাকে হত্যা করে ৭ টুকরো করে সেফটি ট্যাংকিতে রেখে দিয়েছিল পিন্টু। কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান জানান, পিন্টু দেবনাথ এবং স্বপন কুমার পরস্পর বন্ধু ছিল। তারা একসঙ্গে চলাফেরা করতো। পিন্টু দেবনাথ স্বপন কুমারকে উৎসাহ দিয়ে ইন্ডিয়া নিয়ে যায়। একই সঙ্গে ইন্ডিয়া ফ্ল্যাট কিনে দেওয়ার কথা বলে স্বপন কুমারের কাছ থেকে ৩৫ লাখ টাকা নেন। কিন্তু পিন্টু দেবনাথ স্বপন কুমারের নামে ফ্ল্যাট না কিনে ভাগ্নির নামে ফ্ল্যাট কিনেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য হয়। তিনি আরও জানান, এই মনোমালিন্যের এক পর্যায়ে স্বপন কুমারকে হত্যার পরিকল্পনা করে পিন্টু। এবং বান্ধবী রত্মা রানীকে দিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলে স্বপনকে। এক পর্যায়ে রত্মা রানীর বাসায় স্বপন কুমারকে দাওয়াত দেওয়া হয় এবং সেখানে খাবারের সঙ্গে নেশাজাতীয় দ্রব্য পান করায়। পরে স্বপন কুমার অচেতন হয়ে গেলে রত্মা রানীর বাসায় থাকা শীল পাটা দিয়ে মাথা আঘাত করে হত্যা করে। হত্যার পর বাসায় থাকা দা দিয়ে মরদেহ খন্ড খন্ড করে বাজারের ব্যাগে ভরে উপরে সবজি রেখে শীতলক্ষ্যায় ফেলে দেয়। আসাদুজ্জামান জানান, এটা একটা নির্মম হত্যাকান্ড। এ হত্যার ঘটনায় তিনজনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেয়া হয়। তাদের মধ্যে পিন্টু দেবনাথকে মৃত্যুদন্ড রত্মা রানীকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং অপর আসামি আব্দুল্লাহ আল মামুনকে খালাস দিয়েছেন আদালত। প্রসঙ্গত: ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর রাতে নারায়ণগঞ্জ শহরের নিতাইগঞ্জের বাসা থেকে স্বপনকে ডেকে শহরের মাসদাইর বাজার কাজী বাড়ির প্রবাসী আজহারুল ইসলামের ৪ তলা ভবনের ২য় তলায় রত্মা রাণী চক্রবর্তীর ফ্ল্যাট বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিয়ে খাবারের সঙ্গে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে প্রথমে স্বপনকে অচেতন করা হয়। এরপর শিল পুতা দিয়ে মাথায় আঘাত করে রতœা ও পিন্টু। পরে অচেতন অবস্থায় টয়লেটে নিয়ে স্বপনের মরদেহ ৭ টুকরো করে ব্যাগে ভরে অংশগুলো পিন্টু ঠান্ডা মাথায় ভবনের পাশে খালি স্থানে রাখে। সুযোগ বুঝে দফায় দফায় বাজারে দেহের টুকরোগুলোর উপর সবজি দিয়ে ডেকে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয় পিন্টু।