সংবাদ
নাসিম ওসমান সেতু ঘিরে দুই পাড়ে উচ্ছ্বাস
বন্দর প্রতিনিধি
সদর বন্দরকে একত্র করা শীতলক্ষ্যা ৩য় সেতু নিয়ে নারায়ণগঞ্জবাসীর উচ্ছ্বাসের যেন শেষ নেই। ব্রিজটি উন্মুক্ত করে দিতেই হাজার হাজার মানুষ উঠে যান মূল সেতুতে। এতদিন এপ্রোচ সড়কে উঠে ব্রিজের সৌন্দর্য দেখলেও উদ্বোধনের পরই মাঝে দাঁড়িয়ে ব্রিজ, নদী ও পুরো শহরের দৃশ্য অবলোকন করলেন দু’পাড়ের বাসিন্দারা। গতকাল মঙ্গলবার শীতলক্ষ্যার দুই পাড়ের মানুষ ভীড় জমায় সেতুর উপরে উঠে এর আনন্দ উপভোগ করতে দেখা যায়। গত সোমবার বেলা ১ টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধনের ঘোষণা দিতেই আনন্দ উচ্ছ্বাসে নেমে আসেন বাসিন্দারা। ব্রিজের টোলঘর চালু না হতেই প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, ইজিবাইক, সাইকেল, সিএনজি উঠে পরে ব্রিজে। পারাপার হতে শুরু করেন হাজার হাজার মানুষ। ইজিবাইক, মোটরসাইকেলে চেপে ব্রিজ দেখতে আসেন অনেকেই। হাতে পতাকা, প্ল্যাকার্ড ও মুখে বাঁশি নিয়ে নানানভাবে উচ্ছ্বাস দেখিয়েছেন বাসিন্দারা। সেতুতে আনুষ্ঠানিকভাবে যান চলাচল শুরু করবে গত সোমবার রাত ১২ টা থেকে। সেতুতে টোল আদায়ের হার আগেই নির্ধারণ করে গণবিজ্ঞপ্তি প্রচার করেছে সড়জ। রাত থেকেই শুরু হবে টোল আদায়। যানবাহনের টোল সংগ্রহের জন্য উভয় লেনে তিনটি করে মোট ছয়টি লেন রাখা হয়েছে। সদর ও বন্দরগামী উভয় যানবাহনের টোল সংগ্রহ করা হবে বন্দর প্রান্ত থেকে। ব্রিজে উঠে দেখা যায়, নানান বয়সী মানুষ তীব্র রোদ উপেক্ষা করে ব্রিজ দর্শনে বেড়িয়েছেন। এতদিন ব্রিজের উপর থেকে নদীর সৌন্দর্য দেখতে যেই মানুষরা ছুটতেন মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুর ব্রিজের দিকে, তারা আজ যেন নিজস্ব সেতু পেয়েছেন। তাই উচ্ছ্বাসটা স্বাভাবিকভাবে অনেক বেশি। এর মাঝে হাঁটা চলার জন্য পৃথক লেন থাকায় অনেক বেশি সুবিধা পেয়েছেন পথচারীরা। পৃথক লেন করে দেয়ায় অনেক বেশি নিরাপদে চলাচল করতে পারবে পথচারী ও যাত্রী উভয়ে। ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধ সফিউদ্দিন ব্রিজের উপর থেকে তাকিয়ে ছিলেন কয়লা ঘাটের দিকে। এই কয়লা ঘাট দিয়েই নদী পারাপার হতেন তারা। ব্রিজ পেয়ে অনুভূতি জানতে চাইলে বলেন, ‘ব্রিজ হইবো এতদিন খালি শুনছি। যখন বানাইতাছে তখন ভাবসি দেইখা যাইতে পারুম তো? আজকে ব্রিজের উপর থেকে নিজের এলাকা দেখতাছি। অনেক ভালো লাগতাছে। এখন আর ট্রলারে কইরা বন্দরে যাইতে হইব না। ব্রিজ দিয়া তাড়াতাড়ি যাইতে পারবো। সোলাইমান ইমরান নাম এক তরুণ ঠাট্টা করে বলেন, সদর আর বন্দরবাসীর মাঝে যদি এখন বিয়ে হয় তাহলে আর গাড়ি নিয়ে কাঁচপুর ঘুরতে হবে না। সৈয়দপুর দিয়েই ব্রিজ পার হয়ে বন্দরে যেতে পারবে। আগে তো সেই চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর ব্রিজ ঘুরে যেতে হতো। অন্তত ২০ কিলোমিটার পথ ঘুরতে হতো তাদের। এখন দূরত্ব কমে গেলো। ব্রিজে ঘুরতে আসতে দেখা যায় বিভিন্ন স্কুলের ইউনিফর্ম পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের। বন্দরের হাজী আলমচান স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইমন বলেন, ‘ব্রিজটা অনেক সুন্দর। রাতের বেলা আরও অনেক সুন্দর লাগবে। আগে ঐপারে (সদর) যেতে অন্তত ২০ টাকা খরচ করতে হইতো। এখন তো ফ্রিতেই যেতে পারবো। আগে গাড়ি নিয়ে অনেকে আসতে পারতো না। এখন সেই সমস্যা আর থাকবে না।’ সৈয়দপুর বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র নাদিম বলেন, অনেকদিন ধরে ব্রিজটা দেখছিলাম। এতদিন পরে ব্রিজ খুলে দেয়ায় ভালো লাগতাছে। বন্দরে আমার কিছু বন্ধু থাকে, ওদের সাথে চাইলেই দেখা সাক্ষাৎ করা যাবে। আগে বন্দর যাইতে হলে অনেক চিন্তাভাবনা করতে হইতো। এখন তো হেঁটেই চলে আসা যাবে। সেতুটির প্রকল্প পরিচালক শোয়েব আহমেদ বলেন, ‘শীতলক্ষ্যা ৩য় সেতুটি জাতীয় সেতু। এর মাধ্যমে পদ্মাসেতু থেকে মুক্তারপুর হয়ে জাতীয় মহাসড়ক এক এবং দুইকে সংযুক্ত করবে। স্থানীয়দের চাইতে জাতীয়ভাবে এর অবদান বেশি হবে। পাশাপাশি সময় ও দূরত্ব উভয়ই সাশ্রয় করবে নাসিম ওসমান সেতুটি।’ উল্লেখ্য, ৬০৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে এই সেতুটি নির্মাণ করেছে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রা করপোরেশন। সেতু নির্মাণে প্রায় ৩৪৫ কোটি ২০ লাখ টাকা ঋণ সহায়তা দিয়েছে সৌদি সরকার। বাকি ব্যয় বহন করেছে বাংলাদেশ।