সংবাদ
পরিকল্পিত নগরায়ন চায় না’গঞ্জবাসী!
চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে আলোচিত শহর নারায়ণগঞ্জ। নারায়ণগঞ্জ দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় রাজস্ব বেশী দেয়ার পরও এই শহর পরিকল্পিত ভাবে গড়ে উঠেনি। এখনো শহরের রাস্তাঘাট বা ড্রেনেজ সিস্টেম যে পরিকল্পিত ভাবে করা হচ্ছে তা বলা যাবে না। শহরে এক সময় রিকশার আধিক্য থাকলেও ইজিবাইক বা ব্যাটারী চালিত রিকশার এমন আধিক্য ছিল না। জায়গায় জায়গায় অবৈধ স্ট্যান্ড, রেল লাইনের দুই পাশে অবৈধ দোকানপাট থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ মীরজুমলা সড়কটিসহ পুরো শহরই এখন চাঁদাবাজ আর মাস্তানদের দখলে। এ অবস্থা থেকে নগরবাসী পরিত্রাণ চেয়েও পায়নি। এমনকি শহরকে চলাচলের যোগ্য হিসাবে গড়ে তোলার জন্য প্রশাসনের আগের সেই সহযোগিতা নেই বললেই চলে। খোদ সাংসদ এমনকি নগরমাতা যানজটে ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে থাকলেও যানজট নিরসনে পুলিশ প্রশাসনের তেমন কোন ভ’মিকা নেই। নগরবাসীর অভিযোগ একসময় শহরে পুলিশ প্রশাসনের এত কর্মকর্তা কিংবা সদস্য না থাকার পরও শহরময় এমনকি শহরতলির অলিগলিতে পুলিশের টহল চলত রাতভর। এখন খোদ শহরেই রাত ১০টার পর টহল পুলিশ খুব একটা দেখা যায় না। শহর তলির পাড়া মহল্লায় পুলিশী টহল আগের তুলনায় কমে আসায় কিশোরদের মধ্যে অপরাধ প্রবনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারনে খোদ নগরমাতা ডা. সেলিনা হায়াত আইভী এ ব্যপারে উস্মা প্রকাশ করে প্রশাসনের সহায়তা চেয়েছেন বিভিন্ন সভা সমাবেশে। ধনী শহরের নগরমাতার এমন বক্তব্যে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করে তাকে কঠোর হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেছেন, যে নগরমাতা নিজে প্রতিবাদি সেই নগরমাতার শহর এমনতো থাকার কথা নয়। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মেয়র আইভী বলেন, যত্রতত্র বাস স্ট্যান্ড, ট্রাক স্ট্যান্ড, বেবি স্ট্যান্ড দেখতে চাই না। দুঃখের বিষয় এই, আমাদের নিজস্ব পুলিশ নাই, আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট নাই। আমাদের অনেক কিছুই নাই। চেষ্টা করছি লোক নেওয়ার জন্য, এতদিন পৌরসভার লোক দিয়ে চালিয়েছি। ম্যাজিস্ট্রেট নারায়ণগঞ্জে দেয়া হয়, কিন্তু তারা পদোন্নতি হয়ে চলে যায়। নির্ভর করতে হয়, ডিসি সাহেবের উপর ম্যাজিস্ট্রেটের জন্য। নির্ভর করতে হয়, এসপি সাহেবের উপরে, পুলিশ চাইতে হয়। প্রতিদিন কিন্তু চিঠি দিয়ে পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেট চাওয়া সম্ভব হয়ে উঠে না। প্রচুর সার্ভিস আপনাদের দিতে হয়, তারপরও যখন বাধাঁ আসে কাজ করার মানসিকতা অনেক অংশেই কমে যায়। শহরের দিকে তাকালে মা-বাবা আছে বলে তো মনে হয় না। জেলার এসপি সাহেব তোড়জোড় করছে, একটা পরিবেশ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। ডিসি, এসপি, মেয়র একা শহর সামাল দেওয়া সম্ভব নয়, যদি জনপ্রতিনিধিরা পিছন থেকে না সহযোগীতা করেন। আমি বলবো ফুটপাতে হকার না বসুক, হকারের জায়গা হকার বসুক। কিন্তু আরেকজন জনপ্রতিনিধি চায় সড়কে হকাররা বসুক। আমি চাইবো শহর সুশৃঙ্খল করতে, আরেকজন চাইবে না হউক। আমি চাইবো ট্রাক স্ট্যান্ডের জায়গায় ট্রাক থাকুক, কিন্তু কে বা কারা ট্রাক স্ট্যান্ড মন্ডলপাড়াতেই রাখতে হবে কারণ চাঁদাবাজি করতে হবে। আমি চাইবো নির্দিষ্ট জায়গায় বাস-ট্রাক-বেবি স্ট্যান্ড থাকুক। কিন্তু, চাষাড়াতে কে বা কারা এইভাবে স্ট্যান্ড করছে, ২০ টাকা করে তুলে এনসিসি’র লোগো দিয়ে, একাধিকবার সেই রিসিট গোয়েন্দা সংস্থাকে দেয়া হয়েছে। তারপরও, ওখানের কাউকে ধরা হয় না। আমরা জানি কিন্তু মুখ খুলি না। রাইফেল ক্লাবের সামনে, যেখানে এমপি প্রায়ই বসে থাকেন। সেখানে কিভাবে দিন-রাত ২৪ ঘন্টা অবৈধ স্ট্যান্ড থাকে। সারা শহর স্ট্যান্ডের নগরী, সিদ্ধিরগঞ্জে পা ফেলা যায় না। শিমরাইল থেকে ১১নং ওয়ার্ড পর্যন্ত অটো আর অটো। এই শহরের মানুষ জানে কিন্তু বলছে না। তাদের হয়ে আমিই বলছি, মৃত্যু পর্যন্ত বলছি। নারায়ণগঞ্জের মেয়র শুধু মামলা করে এমন মন্তব্য করে মেয়র আইভীকে বিভিন্ন সভা সমাবেশে বলতে শুনা গেছে, মামলা না করে উপায় নেই, আপনাদের স্বার্থে এবং জনগণের স্বার্থেই করি। যতগুলি মামলা করেছি, রেলওয়ে, বিআইডব্লিউটিএ, চিত্তরঞ্জন মাঠের জন্যসহ সবগুলি মামলা নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য করেছি। আপনারা জানেন, পুকুরগুলো সংরক্ষণের কাজ শুরু করেছি এবং বাকিগুলোও হয়ে যাবে। মেয়র আইভী বলেন, পরিকল্পিত নগরায়নের জন্য আমাদের যে কাজগুলো করা দরকার সেগুলো করতে চাচ্ছি, কিন্তু পারছি না। কেন পারছি না? সেটা হলো রাজউক। রাজউক আমাদের জন্য অনেক বড় বাধাঁর তৈরি করে রেখেছে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-গাজীপুর রাজউকের আন্ডারে। রাজউকের জায়গাগুলো দীর্ঘদিন আমরা দখলে রেখেছিলাম। কারণ, একটা সময় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২৪ একর জায়গা রাজউক একোয়ার করেছিল, এ শহরকে নগরায়ন করে দিবে বলে। বঙ্গবন্ধু রোড তারা করে দিয়েছিল, কিছু মার্কেট করে দিয়েছিল। পরবর্তীতে অনেক খালি জায়গা ছিল, কিন্তু সেগুলো তারা ফেরত দেয় নি, প্লট করে বিক্রি করেছে, এখনও করছে। ২০০৩ সালে আমি ক্ষমতায় এসে, রাজউকের জায়গাগুলো সব ফেরত চেয়েছিলাম, ২০০৫ সালে মামলা করেছিলাম আমাদের সম্পত্তি ফেরত দেয়া হোক। সেই মামলায় আন্দোলনে আমার সাথে নগরবাসীসহ বহু মানুষ যুক্ত হয়েছিল। অনেক হর্কাস মার্কেট করে দিয়েছিলাম, তৎকালীন সময়ে তারাও আমার সাথে যুক্ত হয়েছিল। ঢাকা শহরে রাজউকে গিয়ে নারায়ণগঞ্জের লোকজন ঘেরাও করেছে, অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছিল আমার কয়েকজন কাউন্সিলরও। তারপরও আমরা মামলা কন্টিনিউ করেছি, সেই মামলার মধ্য দিয়েই, কিভাবে রাজউক ব্যক্তির কাছে জায়গা বিক্রি করে দেয়। এই শহরের জনপ্রতিনিধিরা, তারা এই শহরকে রক্ষা করার জন্য আপনাদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে, শপথ নিয়েছে, দেশের সেবা করবে, শহরের সেবা করবে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে, সেই জনপ্রতিনিধিরা রক্ষক হয়ে কিভাবে তারা ভক্ষক হয় সেই প্রশ্ন বিবেকের কাছে এবং নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে রাখতে চাই। কিভাবে মামলা চলমান অবস্থায়, রাজউকের চেয়ারম্যানের সাথে যোগসাজ করে এই নারায়ণগঞ্জ শহরের একজন জনপ্রতিনিধি সেই জায়গাকে বিক্রি করেছে, তার বন্ধুর নামে কিনে নিয়ে এসেছে, ৩ মাসের মধ্যে ৭ কোটি টাকা দিয়ে ১৪ কোটি টাকা বিক্রি করেছে। রাতারাতি আমাদের স্ট্যান্ডগুলো তুলে দিয়ে, সেখানে জবর দখল করেছে। বিচার নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে। যেখানেই আমি কাজ করতে যাই, সেখানেই বাধাঁ পাই। সুতরাং, আমার তো মন্ত্রণালয়সহ সব জায়গায় প্রশ্ন বাধাঁ কেন জনগণের জন্য। আমি একটি প্লটও রাজউকের কাছে চাই নাই, যদি চাইতাম, তাহলে পাইতাম। কিন্তু, নারায়ণগঞ্জের জন্য প্লট চাইতে গিয়ে, নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য কাজ করতে গিয়ে, মামলার পর মামলার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এমনকি আমিতো মামলা খাই, আমার ঠিকাদারদেরও রক্ষা নাই, এখন আমার ইঞ্জিনিয়ারদের বিরুদ্ধেও মামলা শুরু হয়েছে। এই হামলা মামলাকে আমরা ভয় পাই না, কাজ করে যাবো। মেয়র আইভীর বাজেট বক্তব্যকে নগরবাসী মনে করে বাস্তবতার নিরিখে নগরমাতা যদি কঠোর হয়ে শহর থেকে অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধ করেন অবৈধ ভাবে ফুটপাত দখলকারীদের উচ্ছেদ অব্যাহত রাখেন পাশাপাশি শহরের সকল রাস্তা যানচলাচলের জন্য উম্মুক্ত রাখার ব্যবস্থা করেন তবেই নারায়ণগঞ্জ একটি পরিকল্পিত শহর হিসাবে গড়ে উঠতে পারে। রাজনৈতিক বিদ্ধেষ ভুলে আধুনিক নারায়ণগঞ্জ গড়তে শহরের উপর ঝেঁকে বসা সকল পরিবহন থেকে শুরু করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে একটি চলাচলযোগ্য শহর নগরবাসীকে উপহার দিবেন এমন প্রত্যাশা এখনো নগরবাসীর রয়েছে। মেয়র আইভীর পরিকল্পিত শহর গড়তে হলে স্থানীয় সাংসদদের সর্বাত্মক সহযোগিতার পাশাপাশি জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সকল জনপ্রতিনিধিদের এক হয়ে কাজ করার মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জবাসীর প্রিয় শহরকে চলাচলের যোগ্য হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। নগরবাসীর ধারণা আগামী বাজেটের আগেই সকলে মিলে নারায়ণগঞ্জ শহরকে চলাচলের উপযোগি শহর গড়ার উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।