সংবাদ
ফতুল্লাবাসীর ভোগান্তির শেষ নেই
ফতুল্লা প্রতিনিধি
প্রচন্ড গরমে বৃষ্টি স্বস্থির বার্তা দিলেও বৃষ্টি হলেই আতঙ্ক বাড়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) প্রকল্পের ভেতরে বসাবাসকারী মানুষের। সামান্য বৃষ্টি হলেই প্রকল্পের অভ্যন্তরীন ফতুল্লায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এদিকে স্থায়ীভাবে ডিএনডির জলাবদ্ধতা নিরসন ও পানি নিষ্কাশন প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হলেও মন্থর গতিতে চলছে ডিএনডি প্রজেক্টের কার্যক্রম। প্রকল্পের ধীরগতিতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে লাখ লাখ বাসিন্দাদের। বর্ষা মৌসুম আসে যায়, কিন্তু ডিএনডি প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হলেও ডিএনডিবাসীর দুর্ভোগের সুরাহা হয়নি। নির্দিষ্ট মেয়াদে এই প্রকল্পের কার্যক্রম সম্পন্ন নিয়ে সংশয়ে ডিএনডিবাসী। সরেজমিনে দেখা যায়, ফতুল্লার ইউনিয়নের দাপাইদ্রাকপুর,লালপুর, পৌষার পুকুর পাড়, কোতালেরবাগ, সস্তাপুর ও কতুবপুর ইউনিয়নের শিয়াচর, লামাপাড়া, রামারবাগ,আলীগঞ্জ, নয়ামাটি, চিতাশাল, নুরবাগ, দক্ষিণ দেলপাড়াসহ আশপাশের কয়েকটি এলাকার হাজারো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। একটানা ২-৩ ঘণ্টার বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় ফতুল্লার অধিকাংশ অঞ্চল। এসব অঞ্চলের সড়ক খানাখন্দে ভরা ও জলাবদ্ধতায় বেহাল। ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় ইট দিয়ে ঘরের আসবাপত্র উঁচু করা হয়েছে। ড্রেন থাকা স্বত্ত্বেও পানি নামছে না। অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে নগরীর বাসা-বাড়ি, দোকান-পাট বৃষ্টির পানিতে তলিয়েছে। দূষিত ও দূগর্ন্ধযুক্ত পানি পেরিয়ে চলাচল করছে এলাকবাসী। এলাকাবাসীর অভিযোগ, সময়মতো খালের ময়লা-আর্বজনা পরিষ্কার না করায় সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে রাস্তাঘাট, বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে যায়। বছরের পর বছর এমন অবস্থা চললেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তৎপর কার্যক্রম না থাকায় ডিএনডিবাসীর দুর্ভোগের সুরাহা নেই । শিয়াচর এলাকার ভুক্তভোগী বাসিন্ধা আনোয়ার হোসেন বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই ফতুল্লার সব জায়গা পানিতে ডুবে যায়। এ সমস্যা দীর্ঘ দিনের। এর স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। অনেকদিন যাবৎ শুনতাছি, ডিএনডির কাজ চলতাছে। কিন্তু রাস্তার পানি প্রতেক বছরই উঠে। পানির কষ্ট করনই লাগে। লালপুর এলাকার বাসিন্দা তারেক বলেন, অনেক বছর যাবৎ কয়েকদিনের বৃষ্টিতেই পানির নিচে তলিয়ে যায় এই এলাকার বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট। জলাবদ্ধতার হাত থেকে বাঁচতে বহুবার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে গিয়ে ধরনা দিয়েছি। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাইনি। লামাপাড়া এলাকার নাদিয়া বেগম সহ কয়েকজন গার্মেন্টমকর্মী জানান, শিল্প-কারখানার বজ্রমিশ্রিত নোংরা কালো পানিতে সয়লাব হয়ে পড়েছে পুরো এলাকা। এই পানি দিয়ে হেঁটেই প্রতিদিন হাজার হাজার কর্মী নিজের কর্মস্থলে যায়। সকাল-দুপুর-বিকাল ৪ বার এই পানিতে চলাচল করে পায়ে খোসপাঁচড়া রোগ হয়ে গেছে। ডিএনডি প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ অনেকাংশেই লাঘব হবে বলে আশাবাদী স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ। জানা যায়, ২০১৭ সালের ৫ ডিসেম্বর এ প্রকল্পের কাজ শুরু করে সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন ব্রিগেডের অধীনস্থ ১৯ ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন ব্যাটালিয়ন। এর আগে, প্রথম ধাপে ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট একনেকের সভায় ডিএনডি প্রকল্পের জন্য ৫৫৮ কোটি টাকার এই মেগা প্রকল্প পাস হয়। ২০১৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর এই প্রজেক্ট সম্পন্ন করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে সেনাবাহিনী চুক্তিবদ্ধ হন। এদিকে কাজ শুরু করে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বুঝতে পারেন মাত্র ৫৫৮ কোটি টাকায় এ প্রকল্প পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। আরও অর্থ বরাদ্দের জন্য তারা আবেদন করেন। ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর একনেকের সভায় ‘ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) এলাকায় নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন (দ্বিতীয় পর্যায়) (প্রথম সংশোধনী)’তে আরও ৭৪১ কোটি ৭১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এতে মোট বরাদ্দ দাড়ায় ১ হাজার ২৯৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সূত্রমতে, দুই দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে প্রকল্পের নতুন মেয়াদ নির্ধারন করা হয়েছে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। তবে কাজের বর্তমান গতিতে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কার্যক্রম সম্পূর্ণ হওয়া নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। ডিএনডির কার্যক্রম শুরু হলেও ডিএনডি খালে অবস্থিত অবৈধ স্থাপনা প্রকল্পের ধীরগতির অন্যতম কারণ বলে জানা যায়। প্রকল্পের কার্যক্রম যথাসময়ে শেষ না হলে আগামী বছরেও এই অঞ্চলের মানুষকে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হবে।