সংবাদ
বক্তাবলী গণহত্যার ৫১ বছরেও ১৩৯ জন শহীদের স্বীকৃতি মিলেনি
আজ ২৯ নভেম্বর। ফতুল্লার বক্তাবলীতে মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাসে এ দিনটি নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য বেদনাবিধুর। একাত্তরের এই দিন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা থানার দুর্গম চরাঞ্চল বুড়িগঙ্গা নদী বেষ্টিত বক্তাবলীতে ১৩৯জন গ্রামবাসীর উপর হত্যাযজ্ঞ চালায় পাক হানাদার বাহিনী। স্বাধীনতা যুদ্ধে নারায়ণগঞ্জে একসাথে এত প্রাণের বিয়োগান্ত ঘটনা দ্বিতীয়টি আর ঘটেনি। কিন্তু স্বাধীনতার ৫১ বছরেও নিহতদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মিলেনি। মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাসে একাত্তরের ২৯ নভেম্বর দিনটি ছিল নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য বেদনাবিধুর। এই দিন ফতুল্লা থানার দুর্গম চরাঞ্চল বুড়িগঙ্গা নদী বেষ্টিত বক্তাবলীতে হত্যাযজ্ঞ চালায় পাক হানাদার বাহিনী। স্বজন হারানোর ব্যাথা ও কষ্ট নিয়েও শ্রদ্ধার সাথে প্রতিবছরই পালিত হয় এই দিবসটি। আজ ২৯ নভেম্বর মঙ্গলবার বক্তাবলি দিবস। এটি নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য অত্যন্ত অর্থবহ একটি দিন। এ উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ শহীদ মিনারে আলোচনা সভা করা হবে। ১৯৭১ সালে ২৯ নভেম্বর সকালে মুক্তিযোদ্ধাদের উপুর্যপরি আক্রমনের মুখে পাক হানাদাররা পিছু হঠতে শুরু করে। এসময় রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনীর পরামর্শে তারা ১৩৯ জন নিরস্ত্র গ্রামবাসীকে ধরে নিয়ে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে। এতে নিহত হয় শাহিদ, ফারুক, অহিদ, মনির, শাহ আলম, রহমতউল¬াহ, শামসুল, আলম, সালামত, খন্দকার, সুফিয়া, আম্বিয়া, খোদেজা সহ ১৩৯ জন মুক্তিকামী মানুষ। পিছু হটার সময় হানাদার বাহিনী পেট্রোল ও গান পাউডার দিয়ে পুড়িয়ে দেয় বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী পার সংলগ্ন বক্তাবলী পরগনার রাজাপুর ডিগ্রীর চর, মুক্তাকান্দি, গঙ্গানগর, রাম নগর, গোপাল নগর, রাধানগরসহ ২২টি গ্রাম। এদিকে স্বাধীনতার পরবর্তি ৫১ বছর ধরে এখন পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জবাসী বক্তাবলী দিবস পালন করে আসছে। একাত্তরের পর থেকে ১৩৯ জন নিহত হওয়া ও ওইদিন পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখযুদ্ধের খবর জেনে আসছিল নারায়ণগঞ্জবাসী। জেলার সকল স্তরের মুক্তিযোদ্ধারাও বিভিন্ন সময়ে বক্তব্য আর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বর্ণনা করেছেন সেই নির্মম হত্যাযজ্ঞের ঘটনা। ১৯৯২ সালের ডিসেম্বর মাসে বক্তাবলীর কানাইনগর ছোবহানিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে শহীদদের স্মরণে শোকসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে জাতির জনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন তার দল ক্ষমতায় এলে শহীদদের যথাযথ মর্যাদা ও তাদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে। ১৯৯৬ সালে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে একই মাঠে শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমানও শহীদদের স্মরণে শ্বেতপাথরে স্মৃতিস্তম্ভ করার ঘোষণা দেন। তারপর আওয়ামীলীগের প্রয়াত, জীবিত প্রথম সাঁরির এমন কোন নেতা নেই যারা বক্তাবলীতে আসেননি। ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান লক্ষ্মীনগর স্কুল মাঠে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। ২০০১ সালে নির্বাচনে মুক্তিযোদ্ধা বিএনপির মো গিয়াসউদ্দিন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর কানাইনগরে স্থাপন করেন স্মৃতিস্তম্ভ। সবশেষ ২০১৪ সালের ২৯ নভেম্বর ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ১৯৭১ সালে নারায়ণগঞ্জের বক্তাবলীতে পাক হানাদার বাহিনী নির্মতায় হত্যার শিকার ১৩৯ পরিবারকে রাষ্ট্রীয় স্বীকিৃতির ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। সেদিন অনুষ্ঠানে তিনি পরিবারগুলোর সদস্যদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেছিলেন, ‘স্বাধীনতার ৪৫ বছরেও পরিবারগুলোকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি এটা পরিতাপের বিষয়। তাই পরিবারগুলোর তালিকা করে জেলা মুক্তিযোদ্ধা তৎকালিন কমান্ডার মো: আলীর কাছে জমা দেওয়ার আহবান করেছিলেন। পরে সেই তালিকা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে শহীদের পরিবারগুলোকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির ব্যবস্থা করা হবে। স্বাধীনতার ৫১ বছর চলে গেলেও বক্তাবলীর সেই শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা মিলেনি। কিংবা শহীদদের স্বরণে রাষ্ট্রিয় ভাবে কোন কর্মসূচিও পালন করা হয় না।