সংবাদ
বন্দরে জেলেদের নীরব কান্না
বন্দর প্রতিনিধি
বংশ পরমপরায় জেলে ছিল দাদা ইন্দ্রমহন চন্দ্র রাজ বংশী। বাবা কান্দন চন্দ্র রাজ বংশীও একই কাজ করতেন। বাবার সাথে নৌকায় গিয়ে জাল ধরা শিখে ছিলেন শ্রী শ্যামল চন্দ্র রাজ বংশী। দীর্ঘ ৩ যুগের জেলে জীবনের স্মৃতির পাতা উল্টে শ্যামল চন্দ্র রাজ বংশী জানান, ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানের সময় কখনোই সরকারি সহযোগিতা পায়নি। শ্রী নির্মল রাজ বংশী নামের আরও এক জেলে বলেন, অভিযানের এই সময়টা আমাদের জীবনে বেকারত্বের অভিযাপ হয়ে নেমে আসে। পুরোটা সময় ঘরে বসে কাটাতে হয়। অনেক সময় ছেলে মেয়েদের মুখে খাবার তুলে দিতে পারি না।। শুধু ইন্দ্রমহন চন্দ্র রাজ বংশী কিংবা নির্মল রাজ বংশী নয়, তাদের মতোই নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় একরামপুর, কলাগাছিয়ার হারজাদী ও নরপদী মিয়ারবাগ এলাকায় শীতলক্ষ্যা ও ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে বসবাস করা জেলে পরিবার কখনোই সরকারের সহযোগীতা পায়নি। মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ আইন, ১৯৫০ এর অধীন প্রণীত মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ বিধিমালা ১৯৮৫ মোতাবেক, ৭ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত আগামী ২২ দিন এ সব এলাকায় মাছ ধরা বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। এ সময়ে জেলেদের পরিবারের জন্য ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে। ইলিশ আহরণ নিষেধাজ্ঞার সময়ে পল্লির অন্তত ২০ জন জেলের সাথে কথা হয়েছে আমাদের। তারা জানিয়েছেন, এ বছরও এই সহযোগীতা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। জেলে খোকন চন্দ্র জানান, আগে এই সহযোগীতা পাওয়ার আশায় মেম্বার-চেয়ারম্যানদের বহুবার বলেছি কিন্তু পাইনি। তাই এখন আর কাউকে বলা হয়ে উঠে না। বছর জুড়ে ব্রহ্মপুত্র নদ, শীতলক্ষ্যা, মেঘনা ও ধলেশ্বরী নদীর মোহনায় মাছ আহরণ করেন তারা। মাছ না পেলে চলে যান চাঁদপুর জেলার মতলবের ষাটনল ইউনিয়ন পর্যন্ত। ৪ বছর আগে অভাবের কারণে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই মেঘনা নদীতে মাছ আহরণ করতে গিয়ে আটক হন নরেশ চন্দ্র ও তার ৩ সহযোগী। নরেশ চন্দ্র আক্ষেপ করে বলেন,অভাবের কারণে তখন নদীতে মাছ ধরতে নেমেছিলাম। কোস্টগার্ডের অভিযানে আটক হওয়ার পর মুন্সিগঞ্জে নিয়ে ৪ হাজার টাকা জরিমানা করে। পরিবারের সদস্যরা ঋণ করে টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে আসে। পরে সেই টাকা পরিশোধ করতে কি যে কষ্ট হয়েছে, বুঝানোর মতো না। জেলে নরেশ চন্দ্র বলেন, ঘরে চাল না থাকলে তো নদীতে নামতে হইবোই। কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার প্রধান জানান, আমি বেশ কয়েক বার জেলেদের চাল না পাওয়ার বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের মাসিক আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে উপস্থাপন করেছি। কিন্তু কেন দেওয়া হচ্ছে না, সে প্রশ্নের সঠিক উত্তর আজও পাইনি। জেলা মৎস কর্মকর্তা মো. আয়নাল হক জানান, জেলে রয়েছে অনেক, তবে বন্দর উপজেলায় ৩৫ জন ইলিশ আহরণের কার্ডধারী জেলে রয়েছে। কিন্তু শুরু থেকে ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় আসেনি। খুবই অল্প সংখ্যক জেলে হওয়ায় হয়তো উপজেলায় বরাদ্দ দেয় না সরকার। বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বি.এম. কুদরত-এ-খুদা বলেন, বন্দরের জেলেদের চাল না পাওয়ার ব্যাপারটি আমার জানা ছিল না। আপনাদের কাছ থেকে জেনে মৎস কর্মকর্তাদের কাছ থেকে খোঁজ নিয়েছি, ২০০ জেলের তালিকা জেলা মৎস কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ঢাকায় পাঠিয়েছি। কিন্তু বরাদ্দ আসেনি। ইলিশ সংরক্ষণের অভিযানের এই সময়ে জেলেদের জন্য চাল বিতরণের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে সরকারের একটি মহৎ কাজ। কিন্তু উদ্যোগটি সঠিক ভাবে পরিচালনা করতে না পারলে, কতটা বাস্তবায়ন হবে। তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোসাম্মৎ রহিমা আক্তার বলেন, আমরা জেলেদের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় আনার ব্যবস্থা করবো।