সংবাদ
রেলপথ আধুনিকায়নে আবারও সময় বাড়লো
১৩৭ বছরের পূরণ রেলপথ। নেই পর্যাপ্ত ট্রেন। যে ক’টি ট্রেন রয়েছে, সে গুলোও থাকছে বেশির ভাগ সময় নষ্ট। আছে লোকবল সংকট। এমন নানা কারণে অবহেলিত ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথ। সময়ের সাথে সাথে হারাতে বসেছে এই পথের ঐতিহ্য। সরকার এই রেলপথের গুরুত্ব পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে ৬৩২ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। তারপরেও এর সুফল কবে মিলবে? এ প্রশ্নের উত্তর মিলছে না। ব্রিটিশ শাসন আমলে পাট রপ্তানীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর। দেশের দক্ষিণ অঞ্চল থেকে এই নদী বন্দরে পাট আনা নেওয়ার জন্য ব্রিটিশ সরকার ১৮৮৫ ও ১৮৮৬ সালে ৪ ধাপে নারায়ণগঞ্জ থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত ১৪৪ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করে। এরপর নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর থেকে স্টিমারের মাধ্যমে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ঘাটে পৌঁছাতো হতো পার্ট। সেখান থেকে ট্রেনে করে আবারও চলে যেতো কলকাতা। কালের বির্বতনে সেই গুরুত্বপূর্ণ পথ ঐতিহ্য হারিয়েছে। তবে, পাট আনা নেওয়ার সেই পথে এখন যাত্রীবাহি ট্রেন চলছে। ছোট্ট হয়েছে পথের দূরত্বও। এখন ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার এই পথের দূরত্ব। বেসরকারি পরিবহন ব্যবস্থায় যাতায়াত ভাড়া ট্রেনের ভাড়ার ৪ গুন। তার উপর দ্রুত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর সুবিধা রয়েছে ট্রেনে। তাই যাত্রীদের পছন্দের তালিকায় সবার আগে থাকে ট্রেন পথ। বিশ্বমহামারী করোনা ভাইরাস শুরুর পূর্বে ২০২০ সালে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ১৬টি ট্রেন ৩২ বার আসা যাওয়া করেছে। যখন ট্রেন বৃদ্ধির কথা চলছিল, তখন উল্টো পথে হেটেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। নারায়ণগঞ্জ স্টেশনের সূচিতে দেখা যায়, সকাল সাড়ে ৬টা থেকে ট্রেন চলাচল শুরু করে। চলে রাত ৮টা ৪০ পর্যন্ত। এই সময়ে মোট ২টি ডেমুসহ ৮টি ট্রেন ১৬ বার যাতায়াত করে এখানে। শুক্রবারসহ সরকারি ছুটির দিনে চলে ৪টি ট্রেন মাত্র ৮ বার।
৭ নভেম্বর নষ্ট অবস্থায় পড়ে আছে শ্যামপুর বড়ই তলা স্টেশনে অনুসন্ধানে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জে সকালে ও দুপুরে ডেমু ট্রেন চলাচল করে। গত ৬ মাস প্রায় পুরোপুরি বন্ধ ছিল ট্রেন দু‘টি। অক্টোবরের ২২ তারিখে পুনরায় চালাচল শুরু করে কিন্তু সর্বশেষ গত ৩ দিন নষ্ট ছিল। এখন ৯ অক্টোবর দুপুর ৩টায় আবার ট্রেনটি চালু করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ স্টেশন মাস্টার কামরুল ইসলাম খান বলেন, ‘পুরন ট্রেন লাইন, ডাবল ট্রেন লাইন, পদ্মা সেতু রেল সংযোগের কাজ চলমান, লোকবল ও স্টেশন মাস্টার সংকটের মতো নানা কারণে এই পথে ট্রেন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার উপর ডেমু ট্রেন বেশির ভাগ সময়ে নষ্ট থাকায় আরও বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তাই ড্রেমু ট্রেন বদলে সাধারণ ট্রেন দিলে অন্তত চাপ আরও কমে আসতো।’ নারায়ণগঞ্জ স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা সুমন জানান, অনেক সময় এখানে দাঁড়িয়ে থেকে যায়গা না পেয়ে বেসরকারি পরিবহনে বেশি টাকা দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। তাই ট্রেন আরও বাড়ানো উচিৎ। ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প ৮২ শতাংশ হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে ১৩৭ বছরের পূরণ এই পথ আধুনিকায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ৩৭৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয় ধরে ২০১৫ সালের ২০ জানুয়ারি ‘ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সেকশনে বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনের সমান্তরাল একটি ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ’ প্রকল্প অনুমোদন করে একনেক (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি)। ২০১৭ সালের জুনে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। প্রকল্পের অধিনে স্টেশন গুলো আধুনিকায়ন, ডাবল রেল লাইন করার পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু প্রকল্পের কাজ শুরুর প্রায় ৮ বছরে ৮২.৩ শতাংশ কাজ হয়েছে। কমেছে কাজের পরিধিও। সাথে বেড়েছে প্রকল্পের ব্যয় ও সময়। এখন ৬৩২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয় ধরে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ রয়েছে। জানা গেছে, বাকি কাজে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই রেলপথে চাষাঢ়া রেলওয়ে স্টেশন এলাকার মাত্র দশমিক ৫১ একর বা ৩১ কাঠা জমি রেলপথটি ডাবল লাইন করার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জমিটি রেলওয়েরই অধিগ্রহণ করা ছিল। এখন বেহাত হয়ে চলে গেছে ব্যক্তি মালিকানায়। এই জমি সংকটে ২ কিলোমিটার অংশ ডাবল লাইন না করে প্রকল্প সমাপ্তের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (এনসিসি) থেকে দশমিক ৫১ একর জমি না পাওয়ার চাষাঢ়া থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত ডুয়েলগেজ সিঙ্গেল লাইন রেখেই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হবে। প্রকল্প পরিচালক মো. সেলিম রউফ জানান, ‘প্রকল্পটির আওতায় শুরুতে ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত ডাবল লাইনের পরিকল্পনা করা হলেও জমি না থাকায় চাষাঢ়া পর্যন্ত হচ্ছে। চাষাঢ়া থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত হবে এক লাইনের। ডিসেম্বরে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। কিন্তু এখনও লাইন বিছানো বাকি। তাই ব্যয় পূর্বের অবস্থায় রেখেই সময় চেয়ে রেল মন্ত্রণায়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’