সংবাদ
সন্দেহভাজন ৩ ঘাতক আটক!
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র কাজী ফারদিন নূর পরশের চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে কয়েকজন র্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের জালে আটকা পড়েছেন। এরা সবাই রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চনপাড়া বস্তি এলাকার বাসিন্দা ও মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত। এদের মধ্যে রায়হান, মাল্টা রনি ও নূরুজ্জামানকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মাদক কেনা-বেচাকে কেন্দ্র করে সেখানেই ফারদিন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বলে একটি সূত্র দাবি করেছে। যদিও র্যাব ও পুলিশের কোনো দায়িত্বশীল কর্মকর্তা স্বীকার করেননি।
এছাড়া ঘটনার রাতে ফারদিন রামপুরা থেকে যার সঙ্গে দেখা করতে জুরাইনে গিয়েছিলেন, তাকে শনাক্ত করা গেছে। ঘাতক চক্রকে ধরতে টানা অভিযান চালাচ্ছে ডিবি ও র্যাব। অন্যদিকে নিহত ছাত্রের বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরার রিমান্ডে দফায় দফায় জেরা করা হলেও তার সম্পৃক্ততাও মেলেনি। এই তরণীর কাছ থেকে বিদায় নেয়ার পর ঘটে ওই হত্যাকাণ্ড, যার সাথে বুশরার যোগসাজশ খুঁজে পায়নি তদন্তকারীরা।
এদিকে এই বুয়েট ছাত্র হত্যাকাণ্ড নিয়ে তদন্ত সংস্থা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এখনো অন্ধকারে রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেছেন, ঘটনার কোনো ক্লু পায়নি ডিবি। ডিবির পক্ষ থেকে কখনো বলিনি যে ফারদিন রূপগঞ্জের চনপাড়ায় গিয়ে মাদকের কারণে মারা গেছেন। ডিএমপির আরেক অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, প্রাথমিকভাবে কিছু ঘটনা আমরা জানতে পারছি। কিন্তু এখনই কিছু বলা যাবে না। যারা তদন্ত করছে, তারা আসল ঘটনা বের করতে সক্ষম হবেন। আমরা সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে এটা নিয়ে কাজ করছি। ফারদিনের বান্ধবী বুশরার বিষয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, তদন্তের একটা বিষয় হলো-কে দোষী তাকে শনাক্ত করা, যে নির্দোষ তাকে বের করে দেয়া। কেউ দোষী থাকলে অবশ্যই তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। এই কাজগুলো শুরু হয়েছে মাত্র।
চাঞ্চল্যকর এ মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, ঘটনার দিন রাতে (৪ নভেম্বর) রামপুরা থেকে জুরাইনে যান ফারদিন। সেখানে আশপাশের এলাকায় ঘোরাঘুরির পর তিনি চনপাড়ায় যান। ওইদিন রাত ২টা ৩৫ মিনিটে ফারদিনের মুঠোফোনের সর্বশেষ অবস্থান (রেডিও সিগন্যাল) চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রে দেখা গেছে। এই সূত্র ধরে তাকে হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজনদের ধরতে চনপাড়া এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে স্থানীয় পুলিশ, ডিবি ও র্যাব। স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, সেই দিন গভীর রাতে চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রের ৪ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার নবকিশলয় উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে একটি মাদক বেচাকেনার স্থানে হইচই ও হট্টগোলের শব্দ পেয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
সূত্র দাবি করছে, বুয়েট ছাত্র ফারদিন হত্যায় জড়িত সন্দেহে স্থানীয় মাদক কারবারি রায়হান ও মাল্টা রনিকে আটক করেছে র্যাব। এরা দুইদিন আগে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ২৩ মামলার আসামি সিটি শাহীনের ঘনিষ্ঠ ছিল। এ ছাড়া নূরুজ্জামান নামে আরেক মাদক কারবারিকে আটক করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে উক্ত তিনজনসহ আরও কয়েকজন ফারদিন হত্যায় জড়িত থাকতে পারে। এছাড়া পারিবারিক, প্রেমঘটিত, রাজনৈতিক বিদ্বেষ ও বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে স্পেনের মাদ্রিদে যাওয়া নিয়ে কারও সঙ্গে কোনো বিরোধকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান আরেকজন পুলিশ কর্মকর্তা।
অ্যাকচুয়ালি কী ঘটনা, এখনো বের করতে পারিনি: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ হত্যার সুনির্দিষ্ট প্রকৃত কারণ এখন পর্যন্ত জানতে পারেনি পুলিশ। তদন্তের দায়িত্বে থাকা গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তা বলছেন, অ্যাকচুয়ালি (প্রকৃত) কী ঘটনা এখনো বের করতে পারিনি। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এই হত্যা মামলার তদন্ত করছেন। তিনি বলেছেন, আমরা কিন্তু ডিবির পক্ষ থেকে কখনো বলিনি যে বুয়েটের ছাত্র ফারদিন ডেমরার চনপাড়ায় গিয়ে মাদকের কারণে মারা গেছেন। আবার মামলার আসামি ফারদিনের বন্ধুকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি, তিনিই খুন করেছেন, সেটিও কিন্তু আমরা বলছি না। আমরা পারিপার্শ্বিকতা, বিভিন্ন বিষয় বিচার-বিশ্লেষণ করছি। তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করে বিচার-বিশ্লেষণ করছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও গণসংযোগ বিভাগের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডিবির প্রধান এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, এই ঢাকা শহরে তারা যেখানে যেখানে গিয়েছেন, আমরা কিন্তু বিভিন্ন টেকনিক্যাল মাধ্যমে সেগুলো খুঁজে বের করেছি। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, আমরা মামলার তদন্তভার পেয়েছি। বুয়েট ছাত্রের বাবা একটি মামলা করেছেন, সেই মামলায় ওই তারই এক বন্ধুকে আসামি করেছেন। তাকেও কিন্তু আমরা গ্রেপ্তার করেছি। পাশাপাশি আমরা কিন্তু এ কথা বলছি না, তার বাবা যার নামে মামলাটি করেছেন, তিনিই এই খুনের জন্য দায়ী। মামলার এফআইআরে তার নাম এসেছে। তিনি রিমান্ডে এসেছেন।
ফারদিনের মোবাইল ফোনে পাঠানো বান্ধবীর শেষ মেসেজ: গত শুক্রবার রাত ১০টা ৫৯ মিনিটে ফারদিনের মোবাইল ফোনে সর্বশেষ একটি মেসেজ (খুদেবার্তা) পাঠান তার বান্ধবী। ওই মেসেজে তার বান্ধবী জানতে চান- ফারদিন ঠিকঠাক মতো পৌঁছেছেন কিনা। উত্তরে ফোনের ওপাশ থেকে এক শব্দে ‘হ্যাঁ’ লেখা হয়। মেসেজের সঙ্গে ‘ভালোবাসা’র চিহ্ন পাঠানো হয়। ওই তরুণীর দাবি, শুক্রবার রাত ১০টা ৯ মিনিটে রামপুরা ব্রিজের কাছে তাকে নামিয়ে দেন ফারদিন। ১১টার দিকে ফারদিনের মোবাইল ফোনে মেসেজ পাঠিয়ে ঠিকমতো পৌঁছেছেন কিনা, তা জানতে চেয়েছেন। ওই তরুণী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানায়, পরদিন শনিবার পরীক্ষা থাকায় বাসায় না ফিরে ক্যাম্পাসে ফিরে যান ফারদিন।
উল্লেখ্য, ৪ নভেম্বর নিখোঁজ হওয়ার তিন দিন পর ৭ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে বুয়েটের পূরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ফারদিনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় গত বুধবার দিবাগত রাতে বাবা কাজী নূর উদ্দিন রাজধানীর রামপুরা থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় ছেলের বন্ধু আমাতুল্লাহ বুশরার নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করা হয়। গত বৃহস্পতিবার সকালে তাকে রামপুরার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি পাঁচ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি পুলিশ।