সংবাদ
সরকার কমায় ১৪টাকা ব্যবসায়ীরা কমায় ২টাকা
বাংলাদেশবার্তা রিপোর্ট
সরকারি ঘোষণা অনুযায়ি প্রতিলিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৪ টাকা কমানোর কথা থাকলেও নারায়ণগঞ্জের বাজারে কমেছে মাত্র ২টাকা। একইসঙ্গে খোলা সয়াবিনের মূল্য ১৭ টাকা কমলেও বাজারে নতুন দামের কোন প্রভাব পরেনি। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের বক্তব্য আগের মতো গতানুগতিক। তারা বলছেন, বেশি দামে কেনা। দাম কমানো সয়াবিন তেলের সরবরাহ এখনও বাজারে আসেনি। অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন, সিন্ডিকেট করে ১৪ টাকার বদলে ২ টাকা কমিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা সাধারণ মানুষের টাকা লুট করছে। গতকাল মঙ্গলবার নগরীর দিগুবাবুর বাজার ঘূরে দেখা যায়, প্রতিলিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১শ’ ৯০ টাকা।একইসঙ্গে খোলা সয়াবিনের লিটারে ১৭৫ টাকা দরে বিক্রি করছেন বিক্রেতা। এদিকে নগরির ডাইলপট্টি এলাকায় পাইকারি তেলের আরৎগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মেসার্স বাণিজ্য বিতানে ১শ’ ৬৩ টাকা কেজি দরে বিক্র হচ্ছে সোয়াবিন তেল। এদিকে ওই বাজারের সবচেয়ে বড় পাইকারি তেলের ডিলার মেসার্স গপিনাথ ট্রেডার্স। তারা মূলত সিটি ও মেঘনা কোম্পানির তেল বিক্রি করেন। গপিনাথ এন্টারপ্রইজে ১ লিটার বোতলজাতে সোয়াবিন তেল বিক্রি করছে ১শ’ ৮৫ টাকায়। এর পাশেই আকেটি বড় সয়াবিন তেল বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান মনির স্টোর। তারা তীর মারকা এক লিটার সয়াবিন তেলের বোত বিক্রি করছেন ১শ’ ৮৬ টাকা দরে। তবে সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৪ টাকা কমিয়ে ১শ’ ৭৮ টাকা, ও খোলা সয়াবিন ১৭ টাকা কমিয়ে ১৫৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু নারায়ণগঞ্জে তেলের পাইকারি ও খুচরা বাজারে তেলের নতুন দামের কোন প্রভাব পড়েনি। দিগুবাবুর বাজারের ব্যবসায়ীরা বলেছেন, সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার কোম্পানিগুলো যে বোতলজাত তেল সরবরাহ করেছে তাতেও দাম কমানোর আগের দরই লেখা আছে। সরকার গত সোমবার তেলের দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু এখনো বাজারে নতুন দামের তেল সরবরাহ করা হয়নি। নতুন তেল বাজারে না আসা পর্যন্ত পুরনো মূল্যেই তেল বিক্রী করতে হচ্ছে। কারণ আমরা আগে বেশি দরে তেল ক্রয় করেছি।তাই বোতলের গায়ে লেখা দামেই বিক্রি করছি। অন্যদিকে ক্রেতারা বলছে, গত সোমবার বোতলজাত ও খোলা সয়াবিন তেল মূল্য কমিয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করেছে সরকার। পাশাপাশি গতকাল মঙ্গলবার থেকে তেলের নতুন মূল্য কার্যকরের ঘোষনাও দিয়েছে সরকার। কিন্তু র্বতমানে পুরোনো দামেই বাজারে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেলের বোতল। ক্রেতারা আরও বলেন, সরকার যখন দাম বাড়ায় তখন অসাধু ব্যবসায়িরা তেল গুদাম বা দোকানে মজুত করে। মূল্যবৃদ্ধির পর সেগুলো আবার বাজারে ছাড়ে, এবং গায়ে পুরোনো দাম লেখা থাকলেও বিক্রি করে নতুন দামে। অনেক সময় পুরনো দাম মুছে, দর বাড়িয়ে নতুন মূল্যের সিল লাগিয়ে বিক্রি করে।কিন্তু এখন যখন সরকার দাম কমিয়েছে তখন তারা নানা অযুহাত দিয়ে আগের বার্তি দামে তেল বিক্রি করছে।তারা আসলে সিন্ডিকেট করে জনগনের টাকা লুট করছে। এ বিষয়ে ডাইলপট্টি এলাকায় খোলা সয়াবিন তেলের পাইকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেসার্স বাণিজ্য বিতানের ম্যানেজার স্বপন সাহা বলেন, গত সোমবার সরকার ১৭ টাকা কমিয়ে তেরের নতুন দাম নির্ধারণ করেছে। তাই গতকাল মঙ্গলবার থেকে তেলের দাম আমরাও কমিয়ে দিয়েছি। আমরা প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১শ’ ৪৯ টাকা ৫০ পয়সা দরে বিক্রি করছি। যা সরকারের র্বতমান নির্ধারিত মূল্যের চেয়েও অনেক কম। এসময় তাদের মূল্য তালিকার দিকে চোখ পড়লে দেখা যায়, সেখানে সয়াবিন তেলের মূল্য লেখা হয়েছে ১শ’ ৬৩ টাকা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন এটা কেজি দর। লিটারে নিলে দাম আরও ১৪ টাকা ৫০ পয়সা কম হবে। মেসার্স গপিনাথ গপিনাথ ট্রেডার্সের মালিকের ছেলে সঞ্জয় সাহা ও দিলিপ সাহা বলেন, আমরা মূলত সিটি ও মেঘনা কোম্পানির তেল বিক্রি করি। সরকারি ঘোষণার পর থেকে তেলের দাম কমিয়ে দিয়েছি। এমনকি সরকারের নির্ধারিত মূল্যের চেয়েও র্বতমানে অনেক কমে তেল বিক্রি করছি। সরকার সয়াবিন তেলের দাম ১ লিটারে ১৪ টাকা কমিয়ে ১শ’ ৭৮ টাকা বিক্রি করার ঘোষনা দিলেও আমরা ১শ’ ৪৭ টাকা বিক্রি করছি। এসময় তিনি ১শ’ ৮৫ টাকা দরে তেল বিক্রির কথা অস্বিকার করেন। একই ভাবে মনির স্টোরের প্রপাইটর তাওহিদুল ইসলাম নয়ন ১শ’ ৮৬ টাকা দরে বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রির কথা অস্বিকার করে বলেন, সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল মঙ্গলবার থেকে ১৪ টাকা কমিয়ে ১শ’ ৭৫ টাকায় তীর মার্কা সয়াবিন তেল বিক্রি করছি। গত সোমবার ১শ’ ৮৯ টাকা বিক্রি করেছি। এদিকে ব্যবসায়িদের এমন জবাবে সাধারণ ভোক্তারা বলছে, সরকার প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৪ টাকা কমিয়ে ১শ’ ৭৮ টাকা করেছে। কিন্তু ব্যবসায়িরা বলছেন তার ১শ’ ৪৭ টাকায় তেল বিক্রি করছেন। এখন ব্যবসায়িদের কথা মত লিটারে ১৪৭ টাকার সাথে যদি আরও ১৪ টাকা যোগ করা হয় তা হলে তেলের মূল্য দাঁড়ায় ১শ’ ৬১ টাকা। তা হলে তাদের হিসেবে তেরের আগের দাম ছিল ১৬১ টাকা। কিন্তু সরকার যে খানে দাম ১৪ টাকা কমিয়ে ১শ’ ৭৮ টাকা বিক্রি করতে বলেছে, সেখানে ব্যবসায়িদের হিসাবে তারা ৩১ টাকা কমিয়ে ১৪৭ টাকায় বিক্রি করছেন বতলজাত সয়াবিন তেল। তারা আরও বলে, খোলা সয়াবিরেন দাম ১৭ টাকা কমিয়ে ১৫৮ টাকা নির্ধারণ কেরেছে সরকার। কিন্তু ব্যবসায়িরা বলছেন, ১শ’ ৪৯ টাকা ৫০ পয়সা দরে ১ লিটার তেল বিক্রি করেন তারা। এখানেও দেখা যায়, সরকারে কমানো নতুন দামের চেয়েও ব্যবসায়িরা কমিয়েছে ৯ টাকা ৫০ পয়সা। এটা আসলে অনেকটা হাস্যকর। সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে তাদের পকেট কাটার একটা নতুন কৌশল বানিয়েছে ব্যবসায়িরা। যদি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে নিয়মিত বাজার তদারকি করা হয় তাহলে আসল ঘটনা বেড়িয়ে আসবে। এছাড়া সঠিক দামে ভোক্তারা তাদের পণ্য ক্রয় করতে পারবে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. সেলিমুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৪ টাকা, একইসঙ্গে খোলা সয়াবিনের মূল্য ১৭ টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদি কোন ব্যবসায়ি সরকারি আদেশ অমান্য করে বেশি দামে তেল বিক্রি করে, বা কোন অনিয়ম পাওয়া গেলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ক্রমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।